কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তরুন উদ্যোক্তদের সমাবেশ ২০২৫ অনুষ্ঠিত
দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
তরুণ উদ্যোক্তাদের টেকসই বিকাশ ও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য নমনীয় আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে হবে
সরকার ঘোষিত “তরুণ উদ্যোক্তা সমাবেশ ২০২৫ ও গ্রাহকসেবা পক্ষ” পালন এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক গত ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জারিকৃত নির্দেশনার আলোকে কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তার কর্মএলাকায় সকল ক্ষুদ্রঋণ শাখা পর্যায়ে “তরুণ উদ্যোক্তা সমাবেশ ২০২৫” আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের চিহ্নিতকরণ, তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার আওতায় আনা এবং স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময়। কোস্ট ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে তার সকল ক্ষুদ্রঋণ শাখা পর্যায়ে পরিশ্রমী ও উদীয়মান উদ্যোক্তা শনাক্তকরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে শাখা পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে ভোলা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা পর্যায়ে একযোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সকল আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তাদের বিকাশ। তরুণদেরকে আর্থিক সহায়তা, ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ ও ব্যবসায়িক দক্ষতার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা চাকরিপ্রার্থী নয় বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন। বক্তারা আরো উল্লেখ করেন, টেকসই এবং কর্মক্ষম উদ্যোক্তারা স্থানীয় ভ্যালু চেইন কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে, জীবিকায় বৈচিত্র্য আনে এবং উপকূলীয় ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক এবং জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে।
চারটি জেলার এই সমাবেশে ২৫০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা, এনজিও প্রতিনিধি, যুব উন্নয়ন, কৃষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ, সিএসও সদস্য এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিগণ। কোস্টের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বর্তমান ও সম্ভাবনাময় ১২০ জন তরুণ উদ্যোক্তা নিজেদের অভিজ্ঞতা, সাফল্যের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
প্রত্যেক জেলার অনুষ্ঠানে কোস্ট ফাউন্ডেশনের রিজিওনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (আরপিসি) মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তারা জানান, গত ২৬ বছর ধরে কোস্ট ফাউন্ডেশন দেশের ১২টি উপকূলীয় জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টের ১ লাখ ৮৩ হাজার সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০% ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কার্যক্রমে জড়িত। কোস্ট ফাউন্ডেশন এই উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে এবং নতুন সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদেরও শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা দুটি ধাপে তাদের সুপারিশ প্রদান করেন। প্রথমত, যে সুপারিশগুলো কোস্ট ফাউন্ডেশন নিজেই বাস্তবায়ন করতে পারে, যেমন- এলাকাভিত্তিক সম্ভাবনাময় ও শিক্ষাবঞ্চিত তরুণদের তালিকা তৈরি করে উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করা, নমনীয় মেয়াদ ও কম সুদের হারসহ তরুণ উদ্যোক্তা অর্থায়ন স্কিম প্রণয়ন করা, জলবায়ুপ্রভাবিত তরুণ, তরুণী এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে আঞ্চলিক ব্যবসায়িক প্রস্তাবনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা এবং নতুন ভ্যালু চেইন তৈরি বা বিদ্যমান ভ্যালু চেইনকে শক্তিশালী করে সরাসরি অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য সুপারিশগুলো হলো- তরুণ উদ্যোক্তাদের সহজে অর্থায়নের সুযোগ দিতে সরকার-এনজিও অংশীদারিত্ব বাড়ানো, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তরুণ উদ্যোক্তা তহবিল বা আর্থিক সহায়তা কাঠামো সম্প্রসারণ এবং তরুণদের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ ও উপকূলীয় অঞ্চলের তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ ও বাস্তবসম্মত স্কেল-আপ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, ছোট পরিসর থেকে যেকোন উদ্যোগ শুরু করাই হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের পথ। যেমন, চট্টগ্রামের এক তরুণ উদ্যোক্তা নাজমুন নাহার জানান, তিনি কোস্ট ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন, বর্তমানে তার মূলধন প্রায় এক কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে এবং তিনি ৪৫ জন কর্মীর কর্মসংস্থান করেছেন। অপরদিকে, কক্সবাজারের মোমেনা আক্তার ব্যক্তিগত জীবনের বিপর্যয় কাটিয়ে কোস্টের সহায়তায় পোশাক ব্যবসা শুরু করেন এবং বর্তমানে স্থানীয় তরুণীদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করছেন। বরিশাল জেলার এক তরুণ উদ্যোক্তা তার স্নাতকোত্তর শেষে নিজ এলাকায় ফিরে এসে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট স্থাপন করে স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
যুব উন্নয়ন, কৃষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের নীতিমালা এখন তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্যোক্তা বিকাশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং তরুণ স্টার্ট-আপ উদ্যোগের প্রতি প্রশাসনিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও জেলা তথ্য কর্মকর্তা জানান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তারা এখন গ্রামীণ ও উপকূলীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে; তাই সরকারি সহায়তা, নীতিনির্ধারণ কাঠামো এবং এনজিও পরিচালিত উদ্যোগগুলোর মধ্যে আরও কার্যকর সংযোগ স্থাপন জরুরি।
এই আঞ্চলিক সমাবেশের মাধ্যমে কোস্ট ফাউন্ডেশন তরুণ উদ্যোক্তা বিকাশ ও কারিগরি শিক্ষার প্রচারে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি উপকূলীয় ও গ্রামীণ এলাকার তরুণদের জন্য অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক উন্নয়নের একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করেছে। এই সমাবেশ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি তরুণ উদ্যোক্তা তার সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ ও পরিবেশ পায়।
Download press release [Bangla] [English]
Newslink
![]() |
|
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |




















