সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭০ বছর পুর্তিতে কক্সবাজারে ক্যাম্পেইনঃ রোহিঙ্গা ত্রাণ তহবিলে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার দাবি

0

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ও জাতিসংঘ প্রণীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭০ বছর পূর্তিতে ৩ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন করেছে কক্সবাজারের মানবাধিকার সংগঠন কোস্ট ট্রাস্ট ও স্থানীয় সুশীল সমাজ সংগঠনের জোট সিসিএনএফ। ৩ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে টেকনাফ ও উখিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবাধিকার রক্ষায় নিয়োজিত জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ত্রাণের তহবিলের ব্যাপারে স্বচ্ছতার দাবি তুলে এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়।

ক্যাম্পেইনের অন্যতম উদ্যোক্তা সিসিএনএফ-এর কো-চেয়ার জনাব আবু মোরশেদ চৌধুরী এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বলেন, সকল মানুষের সমান অধিকার অবশ্যই প্রয়োজনীয়। একই সাথে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে তহবিল সংগৃহীত হয়েছে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করাও আমরা মনে করি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।

কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তৃতীয় দিনে আয়োজিত মানববন্ধনে কোস্ট ট্রাস্টে সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ বলেন, এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১১ মাসের ব্যয়ের জন্য মোট সংগৃহীত তহবিল ৬৮২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু ৬৮২ ডলার। সে হিসেবে গড়ে প্রতি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য বরাদ্দ থাকে ৩,২৮৩ ডলার। সে তুলনায় বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরিপ্রাপ্ত একটি পরিবারের আয় হতে পারে বছরে মাত্র ১,২০০ ডলার। কাজেই উক্ত টাকা দিয়ে একটি রোহিঙ্গা পরিবার যথেষ্ট সচ্ছল হতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায় ১,৩০০ বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পাঁচ শতাধিক দামী গাড়ি দিয়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কত টাকা বিদেশী বিশেষজ্ঞ আর গাড়ির পেছনে ব্যয় হচ্ছে আর কত টাকা প্রকৃত পক্ষে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো পাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা নাই জাতিসংঘ সহ কর্মরত আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর।

এই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে কোস্ট কক্সবাজার আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভবিষ্যতে তহবিল প্রবাহের নিশ্চয়তা না থাকায় এই ব্যয়বহুল পদ্ধতি স্থায়িত্বশীল নয়। স্থানীয় এনজিও ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হলে এবং দেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত করা হলে টেকসইভাবে এই অর্থ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।

গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার বিষয়টি পরিচিত করানোর জন্য এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিশংকর নাথ বলেন, ভবিষ্যতে একটি মানবাধিকার ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে এখনই নতুন প্রজন্মকে মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

পরদিন ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ উখিয়া সরকারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে একই ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন সিরাজী বলেন, মিয়ানমারে যে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য ওই দেশের সামরিক সরকারকে আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখী করা উচিত। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারত।

স্কুলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার পর প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও উপস্থিত সকলের মাঝে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা বিষয়ে সহজবোধ্য ও সচিত্র একটি পুস্তিকা বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এবং উখিয়াতে উপজেলাতেও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

পরদিন ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সকাল দশটায় আয়োজিত মানববন্ধনে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরামের মিজানুর রহমান, কর্মজীবী নারীর সভাপতি রিজিয়া বেগম, কক্সবাজার পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন ফোরামের ইলিয়াস মিয়া, হেল্প কক্সবাজারের আবুল কাসেম, ইপসার কোঅর্ডিনেটর মোঃ হারুন, নোঙ্গরের দিদারুল আলম রাশেদ, জেলা লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট আব্দুস শুকুর প্রমুখ।

কোস্ট ট্রাস্টের মকবুল আহমেদ বলেন, যারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে, তারাই যদি তহবিলের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারে তাহলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে এই তহবিল স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে মানবিক সহায়তায় আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি।
Please Download Press Release [Bangla]
News Cutting