সংবাদ বিজ্ঞতি, কক্সবাজার, ২৫ মার্চ ২০১৮, গত ছয় বছর ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। যে কারণে শতশত একর ফসল আর লবণ চাষের জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ার-ভাটার কারণে কয়েকশ’ একর জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। দ্বীপের মানুষের জীবন, সহায় সম্পত্তি রক্ষায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ খুবই জরুরী। ত্রাণ বা অনুদান চাইছেনা উপকূলের মানুষরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং টেন্ডারিং-এ স্বচ্ছতা এনে প্রয়োজন কংক্রিট-সী-ডাইক পদ্ধতিতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ দেয়ার দাবী তাদের। তা ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার করে আলাদা উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড চায় সাগরের ঢেউয়ের ভয়ে আতঙ্কিত উপকূলের বাসিন্দারা।
১৯মার্চ ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ স্থানীয় ভাবে জলবায়ু শরণার্থী হবে-বিশেষঙ্গদের অভিমত। এদিকে কুতুবদিয়া চলমান ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীর কাজে চরম অনিয়ম দুর্নীতি করা হচ্ছে। সিলেটি পাথরের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় পাথর। কাঁচপুরের কিছু পাথর ব্যবহার হচ্ছে, যার গুণগত মান খুবই খারাপ। আগামী বর্ষার আগেই বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করার দাবীতে ৫টি প্রস্তাব পেশ করেছে দ্বীপাঞ্চলের মানুষগুলো। এসব বিষয়ে সামনে এনে উপকূল রক্ষার দাবীতে জলবায়ূ অর্থায়ন বিষয়ক নাগরিক সমাজের সংগঠন সমূহের সমন্বয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রবিবার (২৫মার্চ) সকালে কক্সবাজার পৌরভবনের সামনের সড়কের মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস আই এম আকতার কামাল আজাদ, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কবি রুহুল কাদের বাবুল, মহেশখালী উপজেলা যুবমহিলা লীগের সভাপতি করিমা আকতার, উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি হুমায়ুন সিকদার, পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল আলীম নোবেল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, স্থায়ীও টেকসই বেড়ি বাঁধের অভাবে ঝড়-তুফান ও ঘূর্ণিঝড়ের প্লাবন এখন ও উপকূলের লোকালয়ে হানাদেয়। উপকূলের মানুষ এখন ও স্বস্তি নিয়ে বসবাস করতে পারছেনা। ঝড়-জোয়ারের প্লাবন প্রতিরোধী একটি বেডিবাঁধের অভাবে তারা বড় অসহায়। বেড়িবাঁধের জন্য সরকারের বরাদ্দের কাজও যথাযথ ভাবে হচ্ছেনা। স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় দ্বীপ ছেড়ে আসা মানুষ নিজেদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে সাহস পায়না। বরং এখন ও উপকূল থেকে স্থানান্তর হওয়া থেমে নেই। বেড়িঁবাধের কাজে অনিয়ম দুনীতির প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, খুব খালি চোখেই কুতুবদিয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। যা দ্বীপবাসীর জন্য বিপজ্জনক। তিনিবলেন, ব্লক নির্মাণ কাজে সিলেটি পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছেনা। স্থানীয় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে।কাঁচপুরের কিছু পাথর ব্যবহার হচ্ছে যার গুণগতমান খুবই খারাপ।
সম্প্রতি কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার একটি চিত্র প্রস্তাবনা আকারে জনগণের সামনে তুলে ধরে আয়োজ করা।
১. কায়সার পাড়া বেড়ি বাঁধ: ৩০০মিটার ব্লক সহ এই কাজটিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রায় এক কোটি টাকার কাজ হয়েছিল। এরপর ও এবার ব্লকসহ কাজ করা হচ্ছে। তবে এই কাজে যে হারে মাটি বাধের ভিতর থেকে নেওয়া হয়েছে, তাতে বাঁধটি থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া তাড়াতাড়ি কাজ শেষ না হলে কায়সার পাড়া অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, জোয়ারের পানি এই দিক দিয়ে ঢোকার সম্ভাবনা বেশি।
২. পশ্চিম তাবলার চর বেড়ি বাঁধ: ব্লকসহ মাটির বাঁধ ধরা হয়েছে ৩৫০ মিটার, অথচ এই অংশে ভাংগা বেড়িবাঁধ আছে ১০০০মিটার। আর তাই জোয়ারের পানি খুব সহজেই এদিক দিয়ে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মাটি আরো উচু করতে হবে। না হলে বর্ষায় জোয়ারের পানি আটকানো অসম্ভব।
৩. কাহার পাড়া বেড়ি বাঁধ: নির্মাণ করা হচ্ছে মাত্র ১০০মিটার, কিন্তু এর ভাঙ্গা অংশ প্রায় ৪০০মিটার। এই ১০০ মিটারের পুননির্মাণ বা সংস্কারে আসলে কোনও উপকার ই পাওয়া যাবেনা। জরুরি ভিত্তিতে গত বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত মানসম্পন্ন কাজ না হওয়ায় পুরো বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে যায়।
৪.কুমিরার ছড়া থেকে মুরালিয়া: মাটির বাঁধ এবং ব্লক সহ ধরা হয়েছে ৮৫০ মিটার প্রায়। মুরালিয়া এবং জেলেপাড়ার বাঁধের অবস্থায় খুবই খারাপ যার কারণে পানি ঢোকার সম্ভাবনা বেশি।
৫.আকবর বলী ঘাট: এবারের নতুন কাজে ধরা হয়েছে ১৮০০মিটার। তবে এখনো মাটির কাজ শেষ হয়নি, এই বর্ষায় শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।মাটির কাজ যেভাবে উচ্চতা কম হয়েছে, ব্লক দেওয়া টিক হবেনা।
Please Download [Position Paper]
Photos
Newspaper: