সাগরে ভাসমান ও মৃত্যুমুখে পতিত বাংলাদেশীদের উদ্ধার ও পাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ

0

কক্সবাজার, ২০ মে ২০১৫। পাচার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে আটক, জিম্মি হওয়া এবং সাগরে ভাসমান বাংলাদেশীদের জরুরীভাবে উদ্ধারের আহবান জানিয়ে কক্সবাজার জেলা সদরে মানব বন্ধন ও সমাবেশ করেছে জেলায় কর্মরত পাঁচটি অধিকারভিত্তিক নাগরিক এবং ফোরাম।

সমাবেশ থেকে বক্তারা মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেন। তারা সাগরে ভাসমান ও মৃত্যুমুখে পতিত বাংলাদেশীদের উদ্ধার ও পাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যৌথভাবে এই মানব বন্ধন এবং সমাবেশের আয়োজন করে কোস্ট ট্রাস্ট, হিউম্যান রাইট্‌স ডিফেন্ডার ফোরাম, জেলা সিটিজেন ফোরাম, হেল্প কক্সবাজার এবং জনসংগঠন।

কোস্ট ট্রাস্টের মকবুল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক দেলোয়ার চৌধুরী, হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেম, হিউম্যান রাইট্‌স ডিফের্ন্ডা‌স ফোরাম নেতা মিজানুর রহমান বাহাদুর ও মং হ্লা রাখাইন, কোস্ট ট্রাস্ট-এর প্রোগ্রাম অফিসার জাহাঙ্গীর আলম এবং জনসংগঠন নেত্রী ফাতেমা বেগম ও নীতি বডুয়া।

আবুল কাশেম বলেন, সাগর পথে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করা শত শত বাংলাদেশী নাগরিক থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় অনাহারে, অর্ধাহারে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুণছে বলে পত্রিকা মারফৎ জানা গেছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, মানব পাচারকারী দালালেরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েও জামিনে বের হয়ে আসছে। মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ করেও তারা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বর্তমানে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। আশা করতে পারি, দালাল চক্র ধরা পড়বে এবং তারা বিচারের আওতায় আসবে।

ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, দালালদের ধরে বিনা বিচারে মেরে ফেলা পাচার সমস্যার সমাধান নয়, বরং তাদের মাধ্যমে দালালচক্রের অন্যান্য নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করাও জরুরী। দালাল কর্তৃক অসহায় মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার করাও একান্ত জরম্নরি। সারাদেশের চিহ্নিত পাচারকারী দালালদের নামের তালিকা সরকারীভাবে পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। দালালদেরকে আত্মসমর্পন করতে ঘোষণা দিতে হবে। না হয় তাদের সম্পত্তি ক্রোক করতে হবে। যেমন করে থাইল্যান্ডে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক দেলোয়ার চৌধুরী বলেন, সরকারের উদ্যোগে সারা দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ও ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় পাচার হওয়া, কারাগারে আটক লোকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের উদ্ধারের জন্য জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। পাচার হওয়া লোক যারা মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে এমন লোকদের দু:স্থ পরিবারকে সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রদানও প্রয়োজন।

মিজানুর রহমান বাহাদুর বলেন, ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার কারাগারে আটক অথবা আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত অথবা সেই সব দেশের সাগরের উপকূলে ভাসমান বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কেন যুবক-কিশোরেরা নিজেদের মা-বাবা, গ্রাম ছেড়ে অবৈধ পথে বিদেশের অনিশ্চিত এবং বেপরোয়া যাত্রায় শরিক হচ্ছে তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। শুধু দালাল চক্রের প্ররোচণাকে দায়ী করে অন্য সামাজিক সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা উচিত হবে না।

মং হ্লা রাখাইন বক্তারা বলেন, দরিদ্র ও অতি-দরিদ্র পরিবারের যুবকদের জন্য এমন সহজ নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে তারা কাজ করতে সহজে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে যেতে পারে। প্রয়োজনে সরকার তাদেরকে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে যাবার প্রাথমিক খরচের টাকা ঋণ হিসেবে যোগান দেবে। ঋণ গ্রহণকারীরা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে উক্ত টাকা সরকারকে বা সরকারের নিযুক্ত ব্যাংককে ফেরত দেবে। একই সাথে এই নীতিমালায় মানবপাচার বিরোধী প্রচারণাও র্অন্র্ভুক্ত থাকবে।