বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদেরকে খাদ্য-বস্ত্র-স্বাস্থ্য-বাসস্থান দিয়েছে এখন দরকার পারস্পরিক সহনশীলতা। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ হলে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান চৌধুরী এ কথা বলেন। গতকাল কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও-ফোরাম আয়োজিত উখিয়া উপজেলা পরিষদ হলে বিশ্ব শরাণার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিএসও-এনজিও-ফোরাম সভাপতি ও পালস কক্সবাজার-এর চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির ভাষণ প্রদান কালে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের নানা দেশের নেতৃবৃন্দগণ মত প্রকাশ করেছেন তা হলো দশ লক্ষের উপর মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে অবস্থান করছেন তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শরণার্থী ক্যাম্পসূহের তুলনায় অনেক ভালো। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পসমূহে যে ভালো অবস্থানে আছেন তার সকল কৃতিত্ব বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ও উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণের। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় জনগণকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি বলেন স্থানীয়দের জন্য কোনো রিলিপের প্রয়োজন নেই, দরকার এলাকার উন্নয়ন ও অবকাঠামোর উন্নয়ন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সহনশীলতা। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের ও এলাকার উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করার জন্য ইতোমধ্যে সরকার ও দাতা সাংস্থাগুলো অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তা বাস্তবায়ন হলে উখিয়া এলাকার অনেক উন্নতি সাধন হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন ১৯৭১ সালে এক কোটির উপরে বাঙালী ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভারতের জনগণের সহযোগিতা ছাড়া আমরা সহজেই স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। তেমনি রোহিঙ্গারাও একদিন তাদের দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সহায়তার কথা স্মরণ করবেন।
কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের সদস্য-সচিব মকবুল আহমদের সঞ্চালনায় পরিচালিত সভায় প্রথমে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কোস্ট ট্রাস্ট-এর পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক। তিনি উখিয়া এলাকার সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সিভিল সোসাইটির নেতৃবৃন্দ সকলকে সভায় যোগদানের জন্য অভিনন্দন জানান।
সভাপতির ভাষণে আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জনগণও ১৯৭১ সালে শরণার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে; তাই আমাদের উচিত বিশ্বের যে কোনো স্মরণার্থীর অসুৃবিধার কথা, তাদের মর্যাদার কথা ভাবা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন অলস জীবনযাপন না করে ক্যাম্পে সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারেন তার কথা ভাবতে হবে। কারন অলসতা সৃষ্টি করে অরাজকতা, তাই তাদেরকে কর্মমুখি তৎপরতার মধ্যে রাখাই বাঞ্চনীয় হবে। সভাপতির ভাষণে আবু মোরশেদ চৌধুরী আরো বলেন, সিসিএনএফ-এর মাধ্যমেই প্রথম স্থানীয়দের অসুবিধার কথা, স্থানীয় পরিবেশ ধ্বংসের কথা, পরিবেশের পুনরুদ্ধারের কথা এবং স্থানীয়দের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার দাবি তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইউএনএইচআর-এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার চুক্তি করায় সিসিএনএফ খুশি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য তারা অনেক কৃতিত্বের দাবিদার।
সভায় স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, এনজিও নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতা যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন: মো: শাহাবুদ্দিন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, অধ্যাপক নুরুল মাসুদ ভুঁইয়া, সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ সিকদার, সভাপতি, সুজন; খুরশীদা বেগম, প্যানেল চেয়ারম্যান, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ, মোজাফ্ফর আহমদ, প্যানেল চেয়ারম্যান, পালং খালী ইউনিয়ন পরিষদ, এডভোকেট আবু মুসা মোহাম্মদ, নির্বাহী পরিচালক, অধিকার বাংলাদেশ; অজিত নন্দী, ফোকাল পার্সন, ব্র্যাক; সাদেকুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়কারী, হেল্প কক্সবাজার; কমরুদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক, উখিয়া প্রেস ক্লাব; মো জাফর আলম, সাধারণ সম্পাদক, ইমাম সমিতি, উখিয়া উপজেলা; হুমায়ূন কবির জোসান, প্রতিনিধি, নয়াদিগন্ত; আনিসুল ইসলাম, ছাত্র প্রতিনিধি।
Photos
Newspaper: