কক্সবাজার, ৩১ মার্চ ২০১৮। কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম এবং কোস্ট ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আজ হোটেল ইউনি-রিসোট-এর কনফারেন্স হলে স্থানীয় অধিবাসীদের উপর বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের আগমনের প্রভাব এবং বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে একটি গণ-সংলাপ সভার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব কে এম আব্দুস সালাম, অতিরিক্ত সচিব, প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্তি সচিব ও রিফিউজি, রিলিফ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। গণ-সংলাপ সভার প্যানেল মেম্বার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা করেন প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএএস এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ফেরামের অধ্যাপক জনাব নাইম গওহর ওয়ারা, আইএসসিজি-র সিনিয়র কো-অডিনেটর জনাব সম্বুল রিজভি, ইউএনএইচসিআর-এর কর্মকর্তা জনাব এলিজাবেথ প্লেস্টার এবং আইওএম-এর কর্মকর্তা জনাব ম্যানুয়েল মনিজ পেরিইরা। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন রূপালী সৈকত পত্রিকার সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী।
এই গণ-সংলাপ সভার মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক -কোস্ট ও কো-চেয়ার কক্সবাজার সিএসও-এনজি ফোরাম এবং আবু মোরশেদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান, পাল্স ও কো-চেয়ার, কক্সবাজার সিএসও-এনজি ফোরাম (সিসিএনএফ)। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কক্সবাজার সিএসও-এনজি ফোরামের কো-চেয়ার আরিফুর রহমান- নির্বাহী পরিচালক, ইপসা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলানা আজিজ উদ্দিন, হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। এ ছাড়াও উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের (রাজাপালং,পালংখালী, হোয়াক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া) মোট ৫০ জন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউ এন এজেন্সি, স্থানীয়, জাতীয়-আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাগণ এবং সুশীলসমাজ, প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান, খুরশিদা বেগম, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল আবছার চৌধুরী, মোজাফফর আহমদ, নুরুল আমিন, হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল আহমদ, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হোসাইন আহমেদ, আবুল হোছেন, এবং মর্জিনা আক্তার সিদ্দিকী, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ সোনা আলী প্রমুখ।
সভায় চেয়ারম্যান মেম্বারদের বাংলা বক্তৃতা উপস্থিত বিদেশী অতিথিদের জন্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব কে এম আব্দুস সালাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই চমৎকার আয়োজনের জন্য আয়োজকরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ধৈর্যে্র পরিচয় দিয়েছেন। এটা ধরে রাখতে হবে, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। কারণ বিশ্বের নজর এখন আং সাং সুচি থেকে শেখ হাসিনার দিকে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ইউ এন-এর পক্ষে মায়নমার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জন্য কাজ করছি। এতে বিশ্বে আমাদের সুনাম বেড়েছে।
দেশী-বিদেশী এনজিও-দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এনজিওগুলোর কাজ জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এনজিওরা যে ভাল কাজ করছে তা জনগণকে জানাতে ও দেখাতে হবে । তিনি বলেন, সে জন্যে এনজিওদেরকে স্থানীয় জনগণের সাথে মিলে মিশে কাজ করতে
হবে। মহাপরিচালক বলেন, এনজিওদের কাজ এখন আর ১৯৮০/১৯৯০ সালের মতো করলে হবে না। এখন ডিজেটাল যুগ, আগের মতো কাজ করলে চলবে না এবং জনগণ মানবে না। তিনি বলেন, মায়ানমার নাগরিকদের ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য্য ধরেছেন আমাদেরকেও ধৈর্য্য ধরতে হবে। তাতে আমরা অবশ্যই সফল হবো।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, আইওএম, ই্উএনএইচসিআর, আইএসসিজি মিলেমিশে একত্রে কাজ করছে এবং আরো সম্পদের ও অর্থের ব্যবস্থা করছে যাতে মায়ানমার বাস্তুচ্যুত নাগরিকসহ কক্সবাজারের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যথাযথ সহায়তা করা যায়। তিনি শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস কিভাবে কাজ করছে সভায় তার বিবরণ দেন। তিনি বলেন আমরা প্রতিদিন ৪ টি ফুটবল মাঠের সমান বন হারাচ্ছি, অন্য ক্ষেত্রেও ক্ষতি কম নয়। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি)-এর রেসপন্স পাবো, যার মধ্যে ২৫% বরাদ্দ স্থানীয় কমিউনিটির জন্য সহায়তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মায়ানমার নাগরিকদের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, মায়নমার নাগরিকদের বঞ্চনা ও বিরোধ সমাধান করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি সভায় মায়ানমার নাগরিকসহ স্থানীয় নাগরিকদের জন্য গৃহীত উদ্যোগসমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
সভার শুরুতে কোস্ট ট্রাস্ট পরিচালিত, মায়ানমার বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠির আগমনের ফলে কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কৃষি ও সর্বোপরি পরিবেশের কি ক্ষতি হয়েছে তার একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন কোস্ট ট্রাস্ট-এর সহকারী পরিচালক জনাব বরকত উল্লাহ মারুফ । মায়ানমার জনগোষ্ঠির আগমনের ফলে উখিয়া-টেকনাফের তথা কক্সবাজার জেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে, যা পূরণ করতে এখনই উদ্যোগ না নিলে দীর্ঘদিন এই ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হবে বলে তার উপস্থাপনায় জানান ।
সর্বশেষে সিএসও এনজিও ফোরামের কো-চেয়ার আবু মোরশেদ চৌধুরী সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
Please Download [Bangla Press Release] [English Press Release] [Presentation]
Photos
Newspaper: